লেখক : শায়খ ইয়াসির ক্বাদি । অনুবাদ : আলী আহমাদ মাবরুর
সহিহ মুসলিমের ৬৭৫২ নং হাদিসটি এমন। হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. বর্ণনা করেছেন,
“যারা একনিষ্ঠ মনে আল্লাহর ইবাদত করে তারা আবারও শয়তানের ইবাদত করবে, সেই আশা শয়তান ছেড়ে দিয়েছে। তবে শয়তান খুবই আশাবাদী যে সে খুবই কার্যকরভাবে উম্মতের মধ্যে বিভক্তি ও বিভাজনের বীজ বুনে দিতে পারবে।”
তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করেই আমাদের যত বিভক্তি:
প্রতিদিন ছোটখাটো নানা ইস্যু নিয়ে উম্মতের লোকেরা বাহাস করে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রসার ঘটার পর এই বিতর্ক ও বাহাস এখন ঘরে ঘরে প্রবেশ করেছে। এক মুসলিম অপর মুসলিমকে গোমরাহ, পথভ্রষ্ট এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে কাফের বলেও ফতওয়া দিচ্ছে। যারা ময়দানে দ্বীনের দাওয়াতি কাজ করছেন, তারা ইসলামের মৌলিক শিক্ষায় জনগণকে শিক্ষিত করার বদলে বরং একে অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়িতে লিপ্ত রয়েছেন।”ইমাম নববী (রহ) উপরোক্ত মুসলিম শরিফের হাদিসের আলোকে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, মূলধারার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম আর কখনোই মূর্তিপূজায় ফিরে যাবে না”
বাস্তবতা তাই বলে, ইসলাম যেভাবে অবিশ্বাস্য দ্রুততার সাথে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়েছে এবং যেভাবে স্থায়ী আসন গড়ে নিয়েছে তা অন্য কোনো ধর্মের ক্ষেত্রেই হয়নি। ইসলামের আগমনের পর যেভাবে বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ এ ধর্মবিশ্বাসকে মেনে নিয়েছে এবং তারপর যেভাবে এর ওপর দৃঢ়তার সাথে অটুট থেকেছেন, মানব ইতিহাসে সে দৃষ্টান্ত বিরল। নিছক ধর্মীয় পরিমন্ডলেই ইসলামের অবস্থান এখন সীমাবদ্ধ নয়। রাজনীতি, বিজ্ঞান, কূটনীতি, সমাজনীতি, গবেষণাসহ মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইসলামকে নিয়ে কাজ হয়েছে এবং চলমান রয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ!!!
ইসলাম সর্বত্রই টিকে থেকেছে:
কাজাখাস্তান থেকে আন্দালুস, ভারতবর্ষ থেকে শুরু করে আফ্রিকা অবধি যেখানেই ইসলাম গিয়েছে, ইসলাম টিকে থেকেছে। রাজনৈতিক কারণে কিছু জায়গা থেকে ইসলামকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ঠিকই কিন্তু মুসলিমরা আবার আইয়ামে জাহেলিয়াতের মতো পৌত্তলিকতায় ডুবে গিয়েছে- এরকম কোনো নজির আমাদের সামনে নেই। মুসলিমরা জাহেলি নানা চর্চায় ডুবে যাচ্ছে, নানা ধরনের বিজাতীয় সংস্করণ ও উপকরণ তাদের মাঝে প্রবেশ করেছে- এটি যেমন একটি বাস্তবতা।আবার,
অন্যভাবে পুনরায় তাদেরকে হেদায়েতের পথে নিয়ে আসার জন্য বিশ্বজুড়ে নানা মাধ্যমে ও প্লাটফর্মে যে কাজগুলো হচ্ছে, ইসলামকে যত আঙ্গিকে মানুষের সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে, জীবনঘনিষ্ঠ হিসেবে যেভাবে ইসলামকে উপস্থাপনের চেষ্টা চলছে তাও প্রশংসার দাবি রাখে।
শয়তানের বৈঠক:
শয়তান প্রতিনিয়ত তার সেনাপতি, কমান্ডার আর সাধারণ শয়তান সেনাদেরকে নিয়ে বসে, বৈঠক করে এবং উম্মতকে পথভ্রষ্ট করার জন্য একের পর এক কৌশল করে বেড়ায়। রাসূল সা.- এর ওফাতের পরপরই শয়তান মুসলিমদের মধ্যে নানা ইস্যুতে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করে সে সময় অনেকে জাকাত দিতে অস্বীকার করে। কেউ কেউ নিজেকে নবী বলেও দাবি করতে শুরু করে। কিন্তু শয়তানের এসব কূটকৌশল সফল হতে পারেনি, কারণ সাহাবিরা শেষ পর্যন্ত একত্রিত থেকে এসব অপকৌশলের বিরুদ্ধে ভূমিকা নিতে পেরেছিলেন।পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে দেখা গেছে, শয়তান উম্মতের মধ্যে বিভক্তি ছড়ানোর জন্য কয়েকটি কৌশলে অগ্রসর হয়।
প্রথমত:
”সে উম্মতের মধ্যে নানা শ্রেণি, গ্রুপ ও সম্প্রদায় তৈরি করে তাদের মাঝে সংঘাত সৃষ্টি করে দেয়।”
দ্বিতীয়ত:
”শয়তান মানুষের ভেতর কল্পিত কিছু ইস্যুর জন্ম দিয়ে তার ভিত্তিতে বিভাজন সৃষ্টি করে।”
তৃতীয়ত:
”কিছু অপ্রয়েজনীয় ইস্যু আমাদের সামনে শয়তান আকর্ষণীয় এবং অতীব জরুরি হিসেবে হাজির করে, আর আমরাও সেগুলো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাই। অথচ , প্রকৃতপক্ষে এ ইস্যুগুলোর তেমন কোনো প্রয়োজনীয়তাই হয়তো নেই।”
মুসলিমরা যে সংকটে:
বিগত অনেক বছর ধরেই মুসলমানেরা যে সংকটগুলো মোকাবেলা করছে তার মধ্যে অন্যতম সংকট হলো মুসলমানেরা ক্ষুদ্র ও কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে মাত্রারিক্ত গুরুত্ব দিয়ে ফেলছে। এই সমস্যাটা জীবনের দু একটা ক্ষেত্রে সংকট তৈরি করছে এমন নয়। আবার এমনও নয় যে, যারা ইসলামিক কাজে সম্পৃক্ত হয়ে আছে, শুধুমাত্র তারাই এই ভুলগুলো করছে। বরং বাস্তবতা হলো, অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ মুসলমানরাই প্রায়শই এই ধরনের ভুল করে বসছে। মুসলমানরা ছোটখাটো অসংখ্য বিষয় নিয়ে পেরেশান থাকে। আর সেই পেরেশোনির কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বিষয়াবলিও তাদের চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে।
কার্টেসি; Khairul Bashar
পোস্ট ট্যাগ:
শয়তানের প্রধান ১০ কাজ | শয়তানের চক্রান্ত | শয়তান কীভাবে প্রতারণা করে | শয়তানের জয়-পরাজয় | আমার সবচেয়ে বড় শত্রু | শয়তানের কুমন্ত্রণা | housing loan | better refinance rates | house mortgage loan | us bank refinance | housing finance companies | wells fargo refinance.
Post a Comment