ভদ্রলোক বললেন, 'হ্যাঁ, এ কথা ঠিক যে, স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ ফ্রি। তবে এখান থেকে যারা ভার্সিটিতে পড়াশোনা করতে যায়, মূলত তাদের জন্যই ধনবান লোকদের কাছে আমরা এ ধরণের আবেদন করে থাকি।'
আমি বললাম, ‘ভার্সিটিগুলোও তো সরকারী। সেখানেও ফ্রি শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। বরং ভার্সিটিতে তো ছাত্রদের শিক্ষাবৃত্তিও প্রদান করা হয় ।
তিনি বললেন, আমি আপনাকে ব্যাপারটি খুলে বলছি
আমাদের এখানে ৯৯% ছাত্রই স্কুল থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে। তাদের যথেষ্ট মেধা ও প্রতিভা থাকে। কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ইসলামিক স্টাডিজ, কম্পিউটার ইত্যাদি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য তারা যখন গ্রামের বাইরে কোনো ইউনিভার্সিটিতে যেতে চায় তখন তাদের বাবা বাধা দিয়ে বলেন, 'যতটুকু শিখেছো, যথেষ্ট! আর পড়াশোনার প্রয়োজন নেই। এখন বাড়িতে থেকে আমাকে সাহায্য করো। আমার সঙ্গে বকরী চরাও'।এ কথা শুনে নিজের অজান্তেই আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম, 'কী! বকরী চরানো?!” শিক্ষক মহোদয় বললেন, 'হ্যাঁ, বকরী চরানো। তখন হতভাগা ছাত্রটি বাবার কথা মত বকরী চরানো শুরু করে দেয় এবং নিজের যোগ্যতা ও প্রতিভাকে গলা টিপে হত্যা করে। বছরের পর বছর এভাবে বকরী চরিয়েই কাটায় ছেলেটি। একসময় বিয়ে করে, সন্তানের বাবা হয়। ছেলেরা বড় হয়, তখন সে নিজেও ছেলেদের সঙ্গে একই আচরণ করে। তার ছেলেরাও বকরী চরাতে থাকে। এভাবেই চলতে থাকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। ‘এর সমাধান?' আমি জিজ্ঞেস করলাম ।
‘এ সমস্যার সমাধানকল্পে আমরা ছাত্রের বাবাকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে ছেলের পরিবর্তে একজন শ্রমিককে বকরী চরানোর জন্য নিয়োগ করি। ছেলের পরিবর্তে শ্রমিকটি বকরী চরায় এবং সেই শ্রমিকের বেতন-ভাতা আমরা বহন করি। এতে ছেলেটি পড়াশোনার সুযোগ পায় । নিজের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারে। শিক্ষাজীবনের শেষ পর্যন্ত ছাত্রটির সার্বিক খরচও আমরা বহন করে থাকি।
এরপর শিক্ষক মহোদয় মাথা নীচু করে বললেন, ‘এভাবে আমরা একটি প্রতিভাকে বকরী চরিয়ে নষ্ট হতে দিতে পারি না। এটা আমাদের জন্য উচিত হবে না।'
পরবর্তীতে আমি তার কথা নিয়ে চিন্তা করলাম
তিনি ঠিকই বলেছেন। কখনো কারো প্রতিভা ও যোগ্যতাকে নষ্ট করতে দেয়া উচিত নয়। প্রতিভা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়েই আমরা সাফল্যের শীর্ষ চূড়ায় উপনীত হই। শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, দাওয়াত ও বক্তৃতা এবং জ্ঞান ও গুণের যে কোনো শাখায় যারা সফল; আপনি লক্ষ করলে দেখবেন, তারা সকলেই নির্দিষ্ট একটি যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে, নির্দিষ্ট একটি পদ্ধতি চর্চা করেই সফলতা লাভ করেছেন। একই কথা প্রযোজ্য তাদের ক্ষেত্রেও, যারা পারিবারিক ক্ষেত্রে একজন সফল স্বামী, সফল পিতা কিংবা সামাজিক আচরণে একজন অন্তরঙ্গ প্রতিবেশী, ঘনিষ্ঠ সহকর্মী।সফলতা লাভের পদ্ধতিগুলো অনেকের প্রকৃতিগতভাবে আয়ত্বে থাকে। আবার অনেককে শিখতে হয়, আলাদাভাবে চর্চা করে সফলতা অর্জন করতে হয়। আমরা এ গ্রন্থে সফল মানুষদের নিয়ে আলোচনা করবো। তাদের অনুসৃত পথ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবো। গভীরভাবে দেখবো, তারা কীভাবে সফল হয়েছেন। কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে সফলতা অর্জন করেছেন। আমরা ভেবে দেখবো, সেসব পদ্ধতি অবলম্বন করে আমরাও সফল হতে পারি কিনা।
কিছুদিন পূর্বে আমি পৃথিবীর শীর্ষ ধনীদের একজন শায়খ সোলায়মান আর-রাজেহীর একটি সাক্ষাৎকার শুনেছি। আপন নীতি ও চরিত্রে, চিন্তা ও চেতনায় তিনি পাহাড়ের ন্যায় অটল ।
তিনি বর্তমানে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের মালিক। হাজার হাজার জমি ক্রয় করেছেন । শত শত মসজিদ নির্মাণ করেছেন। অগণিত এতীমের ভরণ-পোষণ করছেন। এককথায় সফলতার শীর্ষ চূড়ায় আরোহণকারী একজন ব্যক্তি তিনি ।
কিন্তু আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে তার অবস্থান কোথায় ছিলো? কীভাবে তিনি পথচলা শুরু করেছেন? সেসব কথাই তিনি সাক্ষাৎকারে বলেছেন।
তিনি বললেন, ‘আমি ছিলাম অতি সাধারণ একজন মানুষ। দৈনন্দিনের খাবার জোটানো আমার জন্য কঠিন হয়ে যেতো। কখনো কখনো না খেয়েই দিন কাটাতাম। আমার মনে আছে, খাবারের জন্য আমি মানুষের ঘর ঝাড়ু দিয়েছি। দোকানে দোকানে রাতভর জেগে কাজ করেছি।'
এরপর তিনি দারিদ্রের সেই অতল গহ্বর থেকে কীভাবে সাফল্যের শীর্ষ চূড়ায় উন্নীত হলেন, কীভাবে জীবনযুদ্ধে জয়লাভ করলেন, সে কথা বিস্তারিতভাবে বলেছেন।
রাজেহী যে পদ্ধতি অবলম্বন করে সফল হয়েছেন:
যে যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে জীবনে বড় হয়েছেন সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করার পর আমি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, তার মত যোগ্যতা আমাদের অনেকেরই আছে এবং তার পদ্ধতি অবলম্বন করে আমাদের অনেকের পক্ষেই সফল হওয়া সম্ভব। তবে এর জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম, সীমাহীন চেষ্টা ও অবিরাম সাধনা।আমাদের অনেকের মাঝেই চমৎকার কিছু করার, জাতিকে কিছু উপহার দেয়ার যোগ্যতা আছে। কিন্তু নেই সুপ্ত সেই যোগ্যতা ও প্রতিভা উপলব্ধি করার মত
অনুভব-অনুভূতি। নেই তা বিকশিত করার প্রাণপণ চেষ্টা। ফলে সে যোগ্যতার, সে প্রতিভার করুণ অপমৃত্যু ঘটে ।
একজন সফল নেতা, অনলবর্ষী বক্তা, বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ আলিম আমরা হতে পারি না। আমরা কেবল স্বপ্নই দেখে যাই। একসময় আমাদের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।
অবশ্য কেউ কেউ নিজের মধ্যে লুকায়িত প্রতিভা ও যোগ্যতা আবিষ্কার করতে পারে। বাবা-মা, ভাই-বোন, শিক্ষক-শিক্ষিকা, পদস্থ কর্মকর্তা, কল্যাণকামী বন্ধু- সবাই তার প্রতিভা বিকাশে সাহায্য করে। কিন্তু তাদের সংখ্যা নগণ্য, অতি অল্প ।
আমরা এ গ্রন্থে আপনার সুপ্ত প্রতিভাগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করবো। সেগুলো কীভাবে জাগিয়ে তুলতে হয়, কীভাবে বিকশিত করতে হয়- সে পদ্ধতি জানিয়ে দেবো। তাহলে আসুন, এবার শুরু করি।
একটি চিন্তা ...
পর্বত জয় করতে হলে
বিক্ষিপ্ত পাথরখণ্ডের পরিবর্তে দৃষ্টি রাখুন পর্বতচূড়ায় । পর্বতারোহণে সফল হতে হলে লম্ফ-ঝম্পের পরিবর্তে এগিয়ে চলুন দৃঢ় পদে। _তাহলে পদস্খলন হবে না ।
আচরণ দক্ষতার গুরুত্ব, আচরণ পরিচালনার কৌশল, School of Inspiration, আপনি কতটা সামাজিক?, সাংগঠনিক আচরণ মডেল, Top 10 Behavioural Skills, Corporate Behavioural Skills, housing loan, better refinance rates, house mortgage loan, us bank refinance, housing finance companies, wells fargo refinance.
Post a Comment