প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে, এ কথা নাস্তিক আস্তিক নিমিষে সকলেই বিশ্বাস করে কারণ এটার আমরা সকলেই প্রর্ত্যক্ষদর্শী। চাইলেও এই মহাসত্য কে অস্বীকার করার কোন উপায় আমাদের নেই। মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করে মৃত্যুর পরবর্তী অনন্তকালীন জীবন কে। তাই আমাদের সকলেরই উচিত মৃত্যুর পরবর্তী জীবন কে সুন্দর করতে প্রচেষ্টা চালানো বা কাজ করা। অন্যদিকে যখন কোন মুসলিম মারা যায় তখন তার জন্য আমাদের করণীয় কি তা জানা এবং মানার জন্য চেষ্টা করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আসুন আমরা আমাদের করণীয় সম্পর্কে অবগত হই--
১. নিজের ঋণ অথবা মা-বাবার কোনো ঋণ থাকলে তা দ্রুত পরিশোধ করা :
রাসূলুল্লাহ সা. ঋণের পরিশোধ করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন । আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, 'মুমিন ব্যক্তির আত্মা তার ঋণের সাথে সম্পৃক্ত থেকে যায়; যতক্ষণ তা তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হয় ।' (ইবনে মাজাহ্-২৪১৩)। আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূল সা.-এর নিকট যখন কোনো ঋণী ব্যক্তির জানাযা উপস্থিত করা হতো, তখন তিনি জিজ্ঞেস করতেন, 'সে তার ঋণ পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত মাল রেখে গেছে কি?' যদি তাঁকে বলা হতো যে, সে তার ঋণ পরিশোধের মতো মাল রেখে গেছে। তখন তার জানাযার সালাত আদায় করতেন । নতুবা বলতেন, 'তোমাদের সাথির জানাযা আদায় করে নাও।
২. মা-বাবার অসিয়ত পূর্ণ করা- মা-বাবা শরিয়াহ সম্মত কোনো অসিয়ত করে গেলে তা পূর্ণ করা সন্তানদের উপর দায়িত্ব ।
৪. কুরবানি ও দান-সদকা করা :
মৃত মা-বাবার পক্ষ থেকে কুরবানি করলে তার সাওয়ার দ্বারা তারা উপকৃত হবে । রাসূলুল্লাহ সা. ছুরি হাতে নিয়ে দুম্বাটিকে শুইয়ে দিলেন। পশুটি জবেহ্ করার সময় বললেন, বিসমিল্লাহ, হে আল্লাহ তুমি এটি মুহাম্মাদ, তাঁর বংশধর এবং সকল উম্মাতে মুহাম্মাদির পক্ষ থেকে কবুল কর”। এভাবে তিনি তা দ্বারা কুরবানি করলেন। (মুসলিম-৫২০৩)
নিজের জন্য ও পিতা-মাতার জন্য দান সদকা করা । কারণ মৃত্যু হলেই সম্পদ অপরের মালিকানায় চলে যায়। বেঁচে থাকতেই সম্পদকে দানের মাধ্যমে নিজের সম্পদে পরিণত করতে হবে। হজরত আয়েশা রা. বলেন: “এক ব্যক্তি রাসূল সা.-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেছেন। তাই কোন অসিয়ত করতে পারেননি। আমার ধারণা তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন তাহলে দান-সদকা করতেন। আমি তাঁর পক্ষ থেকে সদকা করলে তিনি কি এর সাওয়াব পাবেন? রাসূল সা. বললেন হ্যাঁ, অবশ্যই পাবেন ।” (মুসলিম-২৩৭৩)
৫. হজ-উমরাহ করা :
৬. রোজা রাখা- মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে রোজা রাখা বৈধ হওয়ার দলিল হলো আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন: “যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল এমতাবস্থায় যে তার উপর রোজা ওয়াজিব ছিল। তবে তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিশগণ রোজা রাখবে।” (বুখারি-১৯৫২)
৭. মা-বাবার বন্ধুদের সম্মান করা :
মা-বাবার বন্ধুদের সাথে ভালো ব্যবহার করা, সম্মান করা, তাদেরকে দেখতে যাওয়া, তাদেরকে হাদিয়া দেওয়া। এ বিষয়ে হাদিসে উল্লেখ আছে, আবদুল্লাহ ইবনে দীনার রা. আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণনা করেন, একবার মক্কার পথে চলার সময় আবদুল্লাহ রা.-এর এক বেদুঈনের সাথে দেখা হলে তিনি তাকে সালাম দিলেন এবং তাকে সে গাধায় চড়ালেন যে গাধায় আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা উপবিষ্ট ছিলেন এবং তাঁর (আবদুল্লাহ) মাথায় যে পাগড়িটি পরা ছিলো তা তাকে প্রদান করলেন । আবদুল্লাহ রা. বললেন, তার পিতা, (আমার পিতা) উমার ইবনে খাত্তাব রা.-এর বন্ধু ছিলেন । আমি রাসূলুল্লাহ সা.কে বলতে শুনেছি “পুত্রের জন্য পিতার বন্ধু- বান্ধবের সাথে ভালো ব্যবহার করা সবচেয়ে বড় সওয়াবের কাজ।” (মুসলিম-৬৬৭৭)
৮. আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখা- সন্তান তার নিজের ও তার মা-বাবার আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে । আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার পিতার সাথে কবরে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ভালোবাসে, সে যেন পিতার মৃত্যুর পর তার ভাইদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখে।' (সহিহ ইবনে হিববান- ৪৩২)
১০. মা-বাবার ভালো কাজসমূহ জারি রাখা :
১১. মাঝে মাঝে কবর জিয়ারত করা:
১২. ওয়াদা বাস্তবায়ন করা- সন্তান তার নিজের ও তার মা- বাবার কোনো ভালো কাজের ওয়াদা করে থাকলে সন্তান যথাসম্ভব তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে।
১৩. কোনো গুনাহের কাজ করে গেলে তা বন্ধ করা- সন্তান তার নিজের ও তার মা-বাবার গুনাহের কাজের সিদ্ধান্ত থাকলে তা বন্ধ করবে বা শরিয়ত সম্মতভাবে সংশোধন করে দিবে।
১৪. মাফ চাওয়া- অতীতে কারো সাথে খারাপ আচরণ করে থাকলে বা কারো উপর জুলুম করে থাকলে বা কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে তার কাছ থেকে মাফ চেয়ে নিবে অথবা ক্ষতি পূরণ দিয়ে দিবে।
সদকায়ে জারিয়াহ রেখে যাওয়া-
১. পানির ব্যবস্থা করা (বিশুদ্ধ পানির জন্য ফিল্টার দিতে পারেন)।২. এতিমের/বিধবার প্রতিপালনের দায়িত্ব গ্রহণ করা।
৩. অসহায় মানুষের বাসস্থান/কর্ম সংস্থান তৈরি করা।
৪. গরিব তালিবে ইলমকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। কুরআনের হাফেজ হতে সহায়তা করা।
৫. দাতব্য চিকিৎসালয় বা হাসপাতাল নির্মাণ, একটি হুইল চেয়ার বা বেড বা চেয়ার দান করা।
৬. মসজিদ নির্মাণ। মসজিদে জায়নামাজ, ফ্যান, কিতাব, পাঠাগার গঠন ইত্যাদি হাদিয়া হিসেবে দেওয়া।
৮. রক্ত দান করা/ চিকিৎসায় সহযোগিতা করা।
৯. ফলদায়ক গাছ লাগানো (রাস্তার পাশের পড়ে থাকা জমিতে ফলের বীজ ছিটিয়ে দেওয়া)।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য ও ইসলামী চিন্তাবিদ
পোস্ট ট্যাগ:
Post a Comment