নির্মাণের অপরূপ শৈলী প্রকাশ করে স্থাপত্য। একজন স্থপতি ইতিহাস আর সময়ের ছাপ রেখে যায় এ শিল্পে। একটি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ধারাকে বয়ে বেড়ায় সে দেশের স্থাপত্য। হয়ে ওঠে সাংস্কৃতিক প্রতীক ও শিল্পকর্ম। আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের স্থাপত্য প্রকৌশল। বাংলাদেশের স্থপতিদের কাজ প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশ্ব দরবারে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাবজেক্ট হিসেবে স্থাপত্য বেছে নেওয়ার সময় দ্বিধাগ্রস্ত হন অনেক শিক্ষার্থী। অনেকেরই কোনো ধারণা নেই যে স্থপতি কারা এবং তারা কী করেন। স্থাপত্যবিদ্যায় কোথায়, কী শেখানো হয়, তারা কী কী দক্ষতা অর্জন করে, তারা প্রতিদিন। কতক্ষণ কাজ করে, তারা কার জন্য কাজ করে, তারা কত উপার্জন করে এবং স্থাপত্যবিদ্যায় ক্যারিয়ার কেমন ইত্যাদি। আপনি যদি বিল্ডিং, ডিজাইন এবং অবকাঠামোতে বিশেষ আগ্রহ অনুভব করেন তাহলে স্থাপত্য হতে পারে আপনার জন্য এক উজ্জ্বল ক্যারিয়ার। আপনিও হয়ে উঠতে পারেন একজন স্থপতি।
স্থাপত্যবিদ্যা কী?
একটি ভবনের মূল উপাদান হিসেবে কাজ করে স্থাপত্য। গণিত, বিজ্ঞান এবং শৈল্পিক ভাবনার সমন্বয়ে ভবনের নকশা এবং নির্মাণশৈলীই হলো স্থাপত্য। এখানে শিল্প বা কলা এবং প্রকৌশলেরও সংমিশ্রণ আছে। আপনি শিখবেন কিভাবে ভবনের সঠিক নকশা হাতে বা কম্পিউটার সফটওয়্যার দিয়ে আঁকতে হয় । ভবনের এবং অন্যান্য বাস্তব কাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা, নকশা এবং নির্মাণপ্রক্রিয়া এ কাজের অংশ। একজন স্থাপত্য প্রকৌশলী গ্রাহকের চাহিদা, আর্থিক সামর্থ্য, শৈল্পিক দিক, আশপাশের পরিবেশ এবং তার প্রভাব বিবেচনা করে ভবনের নকশা, নির্মাণ, পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কারে প্রকৌশল শাখার দক্ষতা প্রয়োগ করেন এখানে।
কেন পড়বেন স্থাপত্য?
বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য অধ্যয়নের জন্য আপনাকে কঠোর পরিশ্রমী, সৃজনশীল এবং যৌক্তিক হতে হবে। আপনার যদি একটি শৈল্পিক সত্তা থাকে তাহলে সাবজেক্ট হিসেবে স্থাপত্য প্রকৌশল আপনার জন্য উজ্জ্বল ক্যারিয়ার নিয়ে আসবে। আপনার সৃজনশীল কাজের মধ্য দিয়ে হয়ে উঠবেন একজন দেশ সেরা স্থপতি। আমাদের জাতীয় সংসদ ভবন, পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লা, বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ, কিংবা দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির- এই স্থাপনাগুলো যদি আপনার মনে নতুন চিন্তার খোরাক জোগায় তাহলে বলবো প্রাথমিকভাবে আপনি স্থাপত্য পড়ার জন্য তৈরি আছেন। বিশ্বখ্যাত বাংলাদেশী আমেরিকান স্থপতি ও পুরকৌশলী ফজলুর রহমান খানের নাম আমরা সবাই জানি। তাকে বিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ প্রকৌশলীদের মধ্যে অন্যতম বলা হয়। তিনি পৃথিবীর অন্যতম আকাশচুম্বী উচ্চ ভবন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ার (বর্তমানে উইলিস টাওয়ার) এর নকশা ও গঠনকৌশল প্রণয়ন করেন নব্বই এর দশকের শেষভাগ পর্যন্ত এটি ছিল বিশ্বের উচ্চতম ভবন। আধুনিকতার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নগরায়ণ ও শিল্পায়ন। মানুষের আর্থিক সামর্থ্য বৃদ্ধির সাথে সাথে তারা নতুন নতুন স্থাপনা গড়ে তুলছে। আগে বাণিজ্যিকভাবে এসব ভবন নির্মাণ হলেও এখন কাজের ব্যাপ্তি বেড়েছে বহুগুণ। শুধু স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মন্দির কিংবা সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন নান্দনিক অবকাঠামোই নয় বর্তমানে ব্যক্তি উদ্যোগে বিলাসবহুল ভবন তৈরির প্রবণতা বেড়েছে। নান্দনিক ও আড়ম্বরপূর্ণ জীবনকে বেছে নিয়েছে আধুনিক এই সমাজ। ফলে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় একটি ক্যারিয়ার অপেক্ষা করছে স্থাপত্যে ডিগ্রিধারীদের জন্য ।
ভর্তি পরীক্ষাপদ্ধতি
স্থাপত্যে ভর্তিতে শৈল্পিক ক্ষমতা এবং গাণিতিক দক্ষতা উভয়ই বিবেচনা করা হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে । তবে বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে পরীক্ষা পদ্ধতির ভিন্নতা রয়েছে। স্থাপত্যের মাদার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরীক্ষা পদ্ধতি সবাই অনুসরণ করলেও প্রতি বছর কিছু পরিবর্তন আসছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে । বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় গণিত, পদার্থ, রসায়ন ও ইংরেজি বিষয়ে জিপিএ-৫ পেলে আবেদন করা যাবে। এবং ৬০০ নম্বরের তত্ত্বীয় ও ৪০০ নম্বরের মুক্তহস্ত অঙ্কন পরীক্ষা দিতে হয় । মোট ১ হাজার নম্বরের পরীক্ষা। বুয়েটের পর দ্বিতীয় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসেবে স্থাপত্য বিভাগ চালু করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। তারা মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকের গণিত, পদার্থ, রসায়ন ও ইংরেজি বিষয়ে লিখিত মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নেন। নেই মুক্তহস্ত অঙ্কন পরীক্ষা। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে পরীক্ষা পদ্ধতির ভিন্নতা রয়েছে যা প্রতি বছর সার্কুলারে দেখা যাবে। তবে অধিকাংশ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বুয়েটের পরীক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাই বুয়েটে পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রস্তুতি নিলে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি হয়ে যাবে।কোথায় পড়বেন ?
বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য পড়ানো হয় । এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গুণগত মান নির্ণায়ক যে অ্যাক্রেডিটেশন বা স্বীকৃতি পেয়েছে মাত্র ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক স্থাপত্য শিক্ষাক্রমের শুরু হয় ১৯৬২ সালে। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) দেশের প্রথম স্থাপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইউএসএইডের সহযোগিতায়। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা অধ্যাপকদের প্রচেষ্টায় তৈরি হয় এর পাঠ্যক্রম। আজ অবধি দেশের স্থাপত্য খ্যাতি ও গবেষণার উপর ভিত্তি করে স্থাপত্যে বিশ্বসেরা ১০টি অনেকটাই বুয়েটের পুরনো পাঠ্যক্রমেরই কিছুটা উন্নীত সংস্করণ হলো- দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য বিষয়ে শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করতে পারবেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্থাপত্য বিষয়ে ব্যাচেলর ইন আর্কিটেকচার ডিগ্রি প্রদান করা হয়।সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
বিদেশে উচ্চশিক্ষা
স্থাপত্যে উচ্চশিক্ষায় বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়
চাকরির বাজার / ক্যারিয়ার কোথায়
আর্কিটেক্ট হওয়ার ধাপ | স্থাপত্য কি | স্থাপত্য বিষয়ে | 2022-এ কিভাবে স্থপতি হয়ে উঠবেন | স্থাপত্য দিয়ে বাক্য গঠন | স্থাপত্য শৈলী কি | বাস্তুকলা | স্থাপত্য ও ভাস্কর্য ছবি | housing loan | better refinance rates | house mortgage loan | us bank refinance | housing finance companies | wells fargo refinance.
Post a Comment