একটি উদ্দেশ্য নিয়ে বেঁচে থাকা | Living with a purpose

আবু মুয়াউইয়া ইসমাইল কামদার
অনুবাদ : জাকির হুসাইন

নেক মানুষ তাদের জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়ার জন্য বিভিন্ন চড়াই উতরাই পার হচ্ছে। তারা তাদের জীবনের মধ্য দিয়ে কোনো সত্যিকার পথনির্দেশ এবং মহৎ লক্ষ্য ছাড়াই অতিক্রম করে চলেছে । জীবনের একটি অর্থ খুঁজে বের করতে আরো বেশি মরিয়া হয়ে যায়, যদি তারা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করে। উদ্দেশ্যহীনভাবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করলে সেটা প্রাথমিকভাবে একধরনের শূন্যতা এবং দিশাহীন জীবনের দিকে নিয়ে যায়, কারণ অর্থ-বিত্ত যে কাউকে সুখ কিংবা প্রশান্তির নিশ্চয়তা দিতে পারে না- এই বিধ্বংসী উপলব্ধির মুখোমুখি নিশ্চিতভাবে হতে হয়। সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে সুখের খোঁজে যারা উদগ্রীব হয়ে থাকে, একবার তার নাগাল পেলে অর্থহীন প্রমাণিত হয়ে যায় । আধুনিক বিশ্বের এটা এক সাধারণ সমস্যা।


সম্পদ কি সুখ এনে দিতে পারে?

Living with a purpose

পুঁজিবাদী সভ্যতা প্রচার করেছে ‘সম্পদের দ্বারা সুখ ও সম্পদ অর্জন' করাই হলো এই জীবনের লক্ষ্য। কিন্তু কী ঘটছে, যখন কেউ সম্পদ অর্জনের পরেও সুখী হতে পারছে না? কী হচ্ছে যখন কোনো ব্যক্তি অবশেষে সম্পদ অর্জন করে ধনী হয়ে গেল, তবুও অসীম শূন্যতা তাকে ঘিরে থাকছে, সবকিছুকে উদ্দেশ্যহীন মনে হচ্ছে, এবং জীবনের বাকি অংশে কী করে কাটাবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয়। সুতরাং আরো বেশি পরিমাণ সম্পদ দিয়ে এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। উদ্দেশ্যহীন জীবন প্রকৃতপক্ষে অর্থহীন, বিরক্তিকর এবং হতাশায় পূর্ণ। সারা পৃথিবীর অনেক মানুষই তাদের জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজছে, এবং দার্শনিকরা জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিতর্ক করে ব্যয় করছেন অসংখ্য ঘণ্টা। এখানে তারা ব্যর্থ হলে অনেকেই তাদের নিজস্ব উদ্দেশ্য নিজেরাই খুঁজে নেওয়ার পথ বেছে নিয়েছেন। এভাবে নিজের তৈরি করা পথে জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে নিতে গিয়ে কেউ কেউ মানব কল্যাণ কিংবা সেবার পথ বেছে নিয়েছেন।

তাদের জীবনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করাই তাদের অভিপ্রায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং পরবর্তী পুরোটা জীবন তারা এর জন্য উৎসর্গ করে দেয়। এরকম কর্মকাণ্ড হয়ত কিছু মানুষকে ভালো অনুভূতি দেয়, কিন্তু অন্য অনেকের জন্য, তারা গভীর থেকে বুঝতে পারে- এসব কিছু ঐচ্ছিক সিদ্ধান্ত এবং আকাঙ্ক্ষা; জীবনের অস্তিত্বের নির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্য পূরণ এই কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত নয়। এই ধরনের জনকল্যাণমূলক কাজ ও সেবার বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমাজের কিছু উপকার বয়ে আনলেও জীবনের সত্যিকার উদ্দেশ্য খুঁজে বের করার এই সমস্যার সমাধান হয় না। বরং জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে বের করার জন্য আমাদের অভ্যন্তরে চলতে থাকা অবিরাম তোলপাড়কে ধামাচাপা দেওয়ার মিছে ফাঁদ যেন এসব নিজস্ব নির্ধারিত পথ।

আল্লাহর ইবাদত করাই জীবনের উদ্দেশ্য:

Worship Allah

অথচ উমার ইবনে আবদুল আজিজ (রহ)-এর মতো মহান ব্যক্তিরা সত্যিকার উদ্দেশ্য নিয়ে জীবন যাপন করেছিলেন। তাদেরকে এটা খোঁজার দরকার হয়নি এবং অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের প্রয়োজনও হয়নি । জীবন এবং এর সাথে সম্পর্কিত সকল বিষয় কোন উদ্দেশ্যের সাথে সংযুক্ত সেটা তাদের কাছে পরিষ্কার ছিলো । কারণ দ্বিতীয় উমার এবং তাঁর মতো ব্যক্তিরা সরাসরি ইসলামের শিক্ষা থেকে তাদের জীবনের উদ্দেশ্যকে খুঁজে নিয়েছিলো ।

অন্যান্য সকল ধর্মের বিপরীতে, জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য একদম পরিষ্কার । এটা কুরআনের সূরাহ আজ যারিয়াতে উল্লিখিত হয়েছে, 

“আমি জিন এবং মানুষকে আমার ইবাদাত করা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি ।” (সূরা যারিয়াত : ৫৬)

আয়াতের অর্থ হলো, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে কোনো উদ্দেশ্য অথবা যৌক্তিক কারণ ছাড়া বৃথা সৃষ্টি করেননি । মানুষকে বানানোর সেই ঐশী উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত করা এবং, সেই ইবাদাতের মাধ্যমে এই পৃথিবীর বুকে সেই মহান রবের ঐশী গুণাবলির ঘোষণা দেওয়া । তিনি সুবহানাহু তায়ালা এই পৃথিবীকে মানব জাতিকে পরীক্ষা নেওয়ার স্থান হিসেবে বানিয়েছেন এবং আমাদেরকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন যাতে আমাদের পরীক্ষার ফলাফল আমাদের উপরেই বর্তায়।

সুতরাং, ইসলামের বক্তব্য অনুসারে জীবনের উদ্দেশ্যই হলো 'আল্লাহর ইবাদাত করা' । বাস্তব জীবনে এই কথার অর্থ অনেকেরই বুঝতে কষ্টকর হয়ে যায় । এর মানে কি আমাদের ব্যবসা, উপার্জন, পরিবার পরিচালনা ইত্যাদি বাদ দিয়ে জীবনের পুরোটা আনুষ্ঠানিক ইবাদাতে মগ্ন হওয়া? আসলে তা নয় । ইসলামে ইবাদাতের ধারণা আরো অনেক সূক্ষ্ম দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে ।

ইসলামে ইবাদাত একটি বিস্তৃত পরিভাষা, যেটা নানান রকমের বিশ্বাস, আবেগানুভূতি এবং কর্মকাণ্ডকে অন্তর্ভুক্ত করে। আনুষ্ঠানিক ইবাদাতেই সেটা সীমাবদ্ধ নয়, যদিও সেগুলো ইবাদাতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামে ইবাদাতের ধারণা আনুগত্য আর সমর্পণের মতো। এমনকি ইসলাম শব্দের শাব্দিক অর্থই হলো 'আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দেওয়া'।

সুতরাং যখন কোনো মুসলিম বলে, আমরা বিশ্বাস করি জীবনের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর ইবাদাত করা, এর অর্থ হলো সমগ্র জীবন যাপন এমনভাবে পরিচালনা করতে হবে যাতে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন । অর্থাৎ একজন মুসলিমের সচেতনভাবে করা প্রতিটি কাজের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদাতের প্রকাশ ঘটবে।


বিশ্বাস, কর্মকাণ্ড আর আবেগের সমন্বয় হলো ইবাদাত

যখন একজন মুসলিম বিশ্বাস করে, ‘আল্লাহ তায়ালা আমাকে বিপদের এই সময়ে সাহায্য করবেন, অথবা জীবনের বিভিন্ন যেসব ঘটনা ঘটছে তা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশেই' এই বিশ্বাসই হলো ইবাদাতের একটি অভ্যন্তরীণ রূপ । যখন একজন মুসলিম সালাত আদায় করে, সিয়াম পালন করে, সাদাকাহ করে- এগুলো বাহ্যিক ইবাদাত। যখন একজন মুসলিম আল্লাহকে ভয় করে, ভালোবাসে এবং তাঁর উপর ভরসা রাখে- এসব আবেগ ইবাদাতের একেকটি অভ্যন্তরীণ রূপ।

ইসলামে ইবাদাতের পরিসর এতই বিস্তৃত, দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে এটা অন্তর্ভুক্ত করে থাকে । সঠিক নিয়তে এবং আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত সীমানার ভেতর থেকে এমনকি যদি খাওয়া, ঘুমানো, উপার্জন করা এবং স্ত্রীর সাথে অন্তরঙ্গ হবার মতো একান্ত পার্থিব কর্মকাণ্ডগুলোও করা হয়, এগুলো আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত বলে গণ্য হয়ে থাকে ।


ইসলাম এর অনুসারীদের জীবনকে আল্লাহর জন্য সমর্পণ করে দেওয়ার শিক্ষা দেয় এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতির আলোকে পরিচালিত করবে, যা আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণের বাস্তব প্রয়োগ। পৃথিবীর সমস্ত মুসলিমের জীবন যাপন এই ধারণার আলোকে সুসজ্জিত । বিয়ে থেকে ব্যবসা; সবকিছুর ভিত্তি হবে একটি মৌলিক প্রশ্নের উপর- এই কাজটি কিভাবে করলে সেটা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হবে?

লেখক : আন্তর্জাতিক ইসলামিক স্কলার অনুবাদক : শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ


পোস্ট ট্যাগ:
সময় ব্যবস্থাপনা | মানুষের জীবন কি | জীবনের উদ্দেশ্য কি নয় | জীবনের উদ্দেশ্য কি | বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য কী? | মুসলিম নারীর জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য | লক্ষ্য নিয়ে উক্তি |  housing loan | better refinance rates | house mortgage loan | us bank refinance | housing finance companies | wells fargo refinance.


Post a Comment

Previous Post Next Post